প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে
দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের ইয়কুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ভবন না থাকায় দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং পাশের ইছহাকীয়া এতিমখানার মাদ্রাসা ভবনের কক্ষে চলছে পাঠদান। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। এমন অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দ্রুত স্কুলভবন নির্মাণের পাশাপাশি মানসম্মত টয়লেট ও পানির ব্যবস্থার দাবি জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ইয়াকুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৩২ সালে স্থাপিত হয়। ২০১০ সালে দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১০ বছর যেতে না যেতেই ভবনটি অনেকাংশে ভেঙে যাওয়ায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০২০ সালে মূল ভবনটি কর্তৃপক্ষ পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেন। পরে পরিত্যক্ত ভবন নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হলে তা ২০২৫ সালের জুন মাসে ভেঙে ফেলা হয়। পরে অত্র বিদ্যালয়ের ১৯৬৩ সালে নির্মিত দুইকক্ষ বিশিষ্ট জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে চলছে দুটি শ্রেণি কার্যক্রম এবং পাশের ইছহাকীয়া এতিমখানার মাদ্রাসা ভবনের কক্ষে চলছে বিদ্যালয়ের অফিস কার্যক্রম, শ্রেণি পাঠদান ও মাল্টিমিডিয়া কার্যক্রম। বর্তমানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫১ শিক্ষার্থীর জায়গা হচ্ছে না।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলে শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে টিনশেডের জন্য আবেদন করলে ২০২৪ সালে বরাদ্দ অনুমোদন হলে কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হলেও দরজা, জানালা, বৈদ্যুতিক ইনস্টলেশন না থাকায় শ্রেণি কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও বিদ্যালয়ে মানসম্মত টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৪৮৫ টাকায় তিন কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেড ঘর। কাজ করেন মেসার্স ইকাবাল এন্ড ট্রেডার্স নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোঃ শরীফ জানান, বর্তমানে ঐতিহ্যেবাহী বিদ্যালয়টিতে শ্রেণি কার্যক্রমের কোনো পরিবেশ নেই বললেই চলে। নেই মানসম্মত টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা। বহুবছরের পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে পাঠদান। এতে করে আগামীতে এই বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি কমে যাবে কারণ অভিভাবকরা এমন ঝুঁকিতে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাবেন না।
অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জ্যোৎস্না আরা বেগম বলেন, মূল ভবন ভেঙে ফেলার সময় টয়লেটও ভেঙে ফেলেছে। এখন যে টয়লেট রয়েছে এটা ব্যবহারের উপযোগী নয়। পানির ব্যবস্থা না থাকায় বাহিরের বিভিন্ন পুকুর থেকে দপ্তরির মাধ্যমে টয়লেটের জন্য পানি আনা হয়। অত্র বিদ্যালয়ের ৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬ জনই মহিলা। শিক্ষকদের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে তেমনি শিক্ষার্থীদের একই সমস্যা। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে।
প্রধান শিক্ষক আকলিমা আক্তার বলেন, নতুন টিনশেডে দরজা-জানালা, বৈদ্যুতিক ইনস্টলেশন, ফোরসিলিংসহ আসবাবপত্র দ্রুত পাওয়া গেলে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ, জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদান, টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় ছেলেমেয়েদেরকে ভর্তি করাতে
অভিভাবকদের অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
বিদ্যালয় এডহক কমিটির সদস্য শাহীনা আক্তার জানান, বিদ্যালয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অনেক সমস্যা হচ্ছে বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা হুমকিতে আছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
এডহক কমিটির আরেক সদস্য মাওলানা মোঃ লোকমান হোসেন বলেন, এটি অনেক পুরনো একটি বিদ্যালয়। পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আপাতত মানসম্মত টয়লেট ও পানির ব্যবস্থা করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অনেক সমস্যা হচ্ছে বিশেষ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ জানাই দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের জন্য।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আলী আজগর বলেন, যেহেতু এলজিইডি মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ অর্থায়নে শ্রেণি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে শ্রেণির কক্ষগুলো ব্যবহার উপযোগী করে নির্মাণ করার কথা। বর্তমানে ব্যবহার উপযোগী নয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নানা দুর্ভোগের মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আমি উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডিকে অনুরোধ করব শ্রেণি কক্ষগুলো দ্রুত ব্যবহার উপযোগী করে দেওয়ার জন্য। তাতে করে আমাদের শিক্ষকগন সুন্দর পরিবেশে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করতে পারেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। টিনশেডে দরজা জানালাসহ অন্যান্য উপকরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ মাছুম বিল্লাহ বলেন, বরাদ্দের মধ্যে দরজা,জানালা না থাকায় করা হয়নি। ওয়াশরুমের সমস্যা থাকলে ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাহীদুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে খোঁজখবর নিব।